ব্লগার-ফ্রিল্যান্সার

ধৈর্য্য, শেখার আগ্রহ, আত্মবিশ্বাস- যেকোন বিষয়েই সফল হতে হলে আপনার ভেতরে থাকতে হবে

দ্য অনলাইন ইন্টারভিউ: ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং এগুলো আসলে কী?
মামুন সৃজন: আউটসোর্সিং বলতে সহজ কথায় বলা যায়, দেশের বাইরের কাজ করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন।

আর ফ্রিল্যান্সার কথাটার উৎপত্তি একটু খটমটে। মধ্যযুগীয় ধাঁচের চলচ্চিত্রগুলোর কল্যাণে অনেকেই জেনে থাকবেন, সে সময়ে যুদ্ধও একটা পেশার আওতায় পড়তো। আর তখন সৈনিকদেরও দু’টো গ্রুপ ছিল। একদল ছিল সাধারণ সৈনিক। যারা নিয়মিত বেতন নিত এবং রাজার হয়ে যুদ্ধ করতো।

দ্বিতীয় দলটিকেই বলা হয় Free Lancer এবং পরে Freelancer যা দ্বারা মুক্ত বর্শা নিক্ষেপকারী বা লাঠিয়াল বুঝানো হতো। এরা মূলতঃ কোথাও কোন চাকরী করতো না। যাযাবরের মত ঘুরে ফিরে খাবে এবং যে টাকা দেবে তার হয়েই যুদ্ধ করবে।

এখন সেই ফ্রিল্যান্সারদের দিন ফুরিয়েছে, চর নিয়েও আর মারামারী হয় না, দেশীয় লাঠিয়াল বাহিনীও নেই। কিন্তু নামটি রয়ে গেয়ে কাজের গতিবিধির কারণেই। বর্তমান ফ্রিল্যান্সাররাও একইভাবে কাজ করে থাকেন। চুক্তিভিত্তিক কাজ করে থাকেন সেটা হোক- ওয়েব ডেভলপমেন্ট, সফটওয়ার ডেভলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন বা ডাটা এন্ট্রি।

দ্য অনলাইন ইন্টারভিউ: আপনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। পেছনের কথাটুকু জানতে চাই- কেমন করে সফলতা?
মামুন সৃজন: সফলতার মাপকাঠি কোনটা আসলে তা আমার জানা নেই। তবে এটুকু বলা যায়, এক বছর আগেও চাকরী করে যে বেতন পেতাম এবং যেভাবে আমার পরিবার চলতো তার চাইতে ভাল আছি।

তবে সত্যি কথা বলতে এ বিষয়ে আমার কোন আগ্রহ প্রথমে ছিল না। আমার একটা বন্ধু আছে, নাম সুব্রত বিশ্বাস। ও আসলে আমার জীবনে বারবার আলাদিনের দৈত্যের ভূমিকা নিয়েছে। আগের গল্পগুলো অন্যদিন শোনাবো। সর্বশেষ গল্পটা হচ্ছে, তখন আমি গাজীপুরে একটি প্রিন্টিং প্রেসে ডিজাইনার হিসেবে চাকরী করতাম। একদিন আমাকে ফোনে বললো, ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে ওর নাকি আগ্রহ জন্মেছে। ব্যাপারটা ভালভাবে জানা দরকার। বললাম, “আচ্ছা ঠিক আছে, তোকে পরে জানাবো।”

তখন মনে পড়লো, oDesk-এ একটা একাউন্ট করেছিলাম অনেক আগে। খুজে পেতে সেই একাউন্টের আইডি পাসওয়ার্ড বের করলাম। এখন আমার ফিফটি পার্সেন্ট বন্ধু এই লাইনে থাকলেও তখন এমন কেউ ছিল না যে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারে। ওডেস্কের কমিউনিটি ফোরাম, ব্লগসহ বিভিন্ন ব্লগ-ফোরাম পড়তে থাকলাম, আর দিনদিন সাহস বাড়তে থাকলো। একদিন জানতে পারলাম, আমার এক বন্ধু “সমিরণ মণ্ডল” যাকে সবাই “মিল্টন” নামেই চেনে সে কয়েকমাস যাবৎ ওডেস্কে কাজ করছে। ওর সাথে একদিন গল্প-গুজবের মাঝে একটি কথা বলেছিল- “আরে মিয়া, মানুষ ৬ মাস ট্রেনিং নিয়ে কাজ করে ফাটিয়ে ফেলছে, আর তুমি ১০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে বসে রয়েছ কেন?” সত্যিই ওর কথায় সেদিন সাহস আরো বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল।

প্রথম বিড করেছিলাম একাউন্ট করার ৮ মাস পর। প্রথম কভার লেটারে লিখেছিলাম-
“আমি দেখতে পাচ্ছি এই কাজটিতে অলরেডি তিনজন ইন্টারভিউ দিচ্ছে। এরপরও আমি এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে, আমি চাই আপনি আমাকেও তাদের সাথে কম্পিটিশন করার সুযোগ দিন। আমি এখানে নতুন যদিও এই পেশায় ৯ বছরের বেশী সময় ধরে কাজ করছি। আমার বিশ্বাস, আমার কাজ আপনার পছন্দ হবে এবং হাসতে হাসতেই আমাকে একটি সুন্দর ফিডব্যাক দিয়ে যাবেন যা আমার ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” ব্যাস, এতটুকুই।

কয়েক ঘন্টা পর দেখি কোন ইন্টারভিউ ছাড়াই তিনি আমাকে হায়ার করেছেন এবং মেসেজে লিখেছেন-
“তোমার পোর্টফোলিও দেখে আমার মনে হল, আমি তোমার মতই কাউকে খুজছি।”

কাজটা শেষে তার খুবই পছন্দ হয়েছিল এবং আমাকে ভাল ফিডব্যাকও দিয়েছিলেন। আর সবচে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি তার প্রতিষ্ঠানে এখন মাসিক বেতনে কাজ করি।

প্রথম বিডেই কাজ পেয়ে আত্মবিশ্বাসটা আরো বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। দু’মাস পর প্রেসের চাকরী ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। এখনতো দেখছেনই, সারাদিন ঘুমাই আর সারারাত কাজ করি। কোথাও যেতে ইচ্ছে হলে ল্যাপটপটা ঘাড়ে ঝুলিয়ে চলে যাই। কাজ করে খেতে গেলে রেসপনসিবিলিটি থাকবেই। তবুও আগের চাইতে অনেক স্বাধীন এতটুকুই আনন্দ।

দ্য অনলাইন ইন্টারভিউ: একজন ফ্রিল্যান্সারের কি কি গুন থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
মামুন সৃজন: ধৈর্য্য, শেখার আগ্রহ, আত্মবিশ্বাস। শুধু ফ্রিল্যান্স নয়, যেকোন বিষয়েই সফল হতে হলে আমি মনে করি এই তিনটি গুন বা দোষ যাই হোক না কেন আপনার ভিতরে থাকতে হবে। ধৈর্য্য বলে আমি বলছি না আমার মত একাউন্ট করার ৮ মাস পর বিড করতে। আমি বলছি, বিড করার আগে পুরো ব্যাপারটি ধৈর্য্য ধরে জানুন। বিড করার পর কোন কাজ না পেলে মনোবল হারালে চলবে না, বিড করতে থাকুন। কাজ জানলে কাজ পাবেন। কেউ আগে পায়, কারো একটু দেরী হয় এই যা পার্থক্য।

এরপর, “আমি একটা কাজ জানি, সারাজীবন এই করেই খাবো।” এই মানসিকতা ছেড়ে প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। যে বিষয়ে না জানেন, অভিজ্ঞদের সহযোগিতা নিন। সর্বোপরি গুগলতো আছেই।

পেশাদার হবার আগে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। এ বিষয়ে ওডেস্ক কমিউনিটিতে একটা লেখা পড়েছিলাম, “কখনোই কাজ ভিক্ষা করবেন না।” এতে আপনার ইমেজ নষ্ট বৈ আর কিছু হবে না। আপনি কাজ জানেন, এই কাজটাতে আপনি অভিজ্ঞ; কথাগুলো দৃঢ়তার সাথে বলুন, আত্মবিশ্বাসের সাথে বলুন। তাই বলে আবার রূঢ় হলে চলবে না।

দ্য অনলাইন ইন্টারভিউ: কীভাবে নতুন একজন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন?
মামুন সৃজন: আপনি যাই করতে চান না কেন, আপনাকে আগে টার্গেট করতে হবে আপনি কোন কাজটি করবেন। এরপর দেখুন, এ কাজ অন্যরা যারা করছে তাদের সফলতার হার কতটুকু। সফলতা বলতে আমি টাকার অংকটাও বুঝাচ্ছি। আপনার যদি মাসিক খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা কিন্তু এ কাজ করে মাসে ২৫ হাজার টাকার বেশী আয় করা সম্ভব না হয় তাহলেতো আপনার লাভের চাইতে লসই বেশী। আপনাকে এমন কিছুই বেছে নিতে হবে যা আপনার চাহিদা মেটাতে পারে।

আপনার টার্গেট স্থির করার পর কাজটিতে আপনার দক্ষতায় কোন ঘাটতি আছে কিনা যাচাই করুন। আগেই বিড করে বসে থাকার দরকার নেই। ধরা যাক, আপনি ওয়ার্ডপ্রেস সংক্রান্ত কাজগুলি করতে চাইছেন। তাহলে ওয়ার্ডপ্রেস ভালভাবে শিখুন। যদি মনে করেন আপনি দক্ষ, আপনার নিজের/বন্ধুবান্ধবের কয়েকটি সাইট ফ্রিতেই বানিয়ে দিন, তাদের ফিডব্যাক নিন। কোন দুর্বলতা ধরা পড়লে সেগুলো কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। নামিদামী সাইটগুলো দেখুন, এগুলোর মধ্যে কোন আপনি বানাতে পারবেন, আর কোনটা বানাতে পারবেন না সেগুলো খুজে বের করুন। শেখার আগ্রহ এমনিতেই জন্মাবে। সবচে বড় ব্যাপার, আপনাকে এটা মনে রাখতে হবে, আপনার নিজের কাজটিও কিন্তু আপনি কোন দক্ষ লোককে দিয়েই করাতে চাইবেন।

আপনার দক্ষতাটিকে আরেকবার পরখ করে নিন আউটসোর্স মার্কেটপ্লেসের স্কিল টেস্টের মাধ্যমে। বর্তমানে অধিকাংশ মার্কেটপ্লেসেই স্কিল টেস্ট দেয়ার ব্যবস্থা আছে। ওডেস্ক, ইল্যান্সে স্কিল টেস্টের জন্য কোন টাকা লাগে না। আপনি যে কাজগুলি করতে চান রিলেটেড স্কিল টেস্টগুলি দিন। আজকাল অনেক ব্লগ-ফোরাম, সোশ্যাল মিডিয়াতে এসব প্রশ্নোত্তর ফাঁস হতে দেখা যায়। আমি ব্যাপারটাকে আন্তরিকভাবে ঘৃণা করি। আমার বক্তব্য হচ্ছে, ওডেস্কের কথাই ধরুন, আপনি মাত্র ৪০টা প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন না, আপনি কাজ করে ৪০ টাকা আয় করতে পারবেন এ নিশ্চয়তা আপনাকে কে দিল? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এভাবে নকল করে পাশ করে অনেকেই কাজ পাচ্ছেন এবং ফলাফল হিসেবে একটা বাজে ফিডব্যাক খেয়ে আজীবনের জন্য ছিটকে পড়ছেন! অবশেষে শোনা যায়, “আমাকে দিয়ে কিছু হবে না!”

ব্যাপারটাকে এভাবে দেখুন না কেন, একটা ছেলে স্কুলে ওয়ান থেকে শুরু করে মাস্টার্স পাশ করে বাংলাদেশে একজন ফার্স্ট ক্লাস অফিসার হিসেবে জয়েন করার জন্য তাকে মোট কত বছর এবং কত টাকা ব্যায় করতে হয়েছে? ২০ বছরই ধরেন আর টাকার হিসেব বাদ দেন। একজন ফ্রিল্যান্সার হবার জন্যতো আপনাকে কোন টাকা খরচ করতে হচ্ছে না ইন্টারনেট বিল ছাড়া। তাহলে এর পেছনে ২০টি সপ্তাহ কি আমরা ব্যয় করতে পারিনা? কেন নকল করা দরকার? আপনি যদি বাস্তবিকই ওয়ার্ডপ্রেস জানেন, তবে প্রশ্নের উত্তরগুলোও আপনার জানা। যে প্রশ্নের জবাবটা পারবেন না, নকল না করে সেটা শেখার চেষ্টা করুন, সফলতা আপনার পেছনে দৌড়াবে। এটা মনে রাখবেন, স্কিল টেস্টগুলো অনেক গবেষণা করেই তৈরী করা হয় দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য। দক্ষ হোন, দক্ষতা যাচাই করুন।

আউটসোর্সিংয়ের জন্য ইংরেজিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যাদের সাথে কাজ করবেন তাদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে, ইংরেজি। এ কথা শোনার পর অনেককেই ঘাবড়াতে দেখেছি। যারা ঘাবড়েছেন বা ঘাবড়াচ্ছেন তাদেরকে বলছি, আপনাকে ইংরেজিতে সাহিত্য রচনা করতে হবে না যদি না আপনি ব্লগ লেখালেখি জাতীয় কাজ করতে চান। আপনার এমপ্লয়ার আপনাকে কি বলতে চাইছেন সেটা বুঝতে হবে এবং আপনি কি বলতে চাইছেন তা বুঝাতে পারতে হবে। ভয়েস সংক্রান্ত কাজগুলো ছাড়া অন্য ক্ষেত্রগুলোতে স্পিকিং স্কিল না থাকলেও চলবে। অধিকাংশ যোগাযোগ হবে ইমেইল বা চ্যাট-এর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে Skype এর ব্যবহারটা অনেক বেশী।

এতটুকু পড়ার পর আপনি যদি মনে করেন আপনি পারবেন, তবে আর দেরী করা দরকার নেই। জামার হাতা গুটিয়ে ফেলুন এবং জীবনের প্রথম বিডটা যত দ্রুত সম্ভব করে ফেলুন। আর যদি মনে করেন, আরেকটু দক্ষ হওয়া দরকার, তবে দেরী করছেন কেন? ১ মিনিট আগে শুরু করলে ১ মিনিট আগেই শেষ হবে।

দ্য অনলাইন ইন্টারভিউ: ফ্রিল্যান্সার হতে হলে কি কম্পিউটার বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ড হতে হবে? কেন?
মামুন সৃজন: আমি কখনোই তা মনে করি না। একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি কী কাজ করতে চান আপনার সে বিষয়ে দক্ষতা থাকা দরকার। কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র হবার দরকার নেই। কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও অসুবিধা নেই ইংরেজি জানলেই চলবে, ইংরেজি ছাড়া আপনার চলবে না কেননা, যাদের কাজ আপনি করবেন, তাদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হবে ইংরেজি।

যদি মনে করেন আপনার আরেকটু ইংরেজি শেখা দরকার, বিবিসি জানালা সাইটটা দেখতে পারেন। প্রথম পর্যায়ে এটাকে বাচ্চাদের সাইট মনে হলেও একটু কষ্ট করে প্রতিদিন ১ ঘন্টা করে এখানে সময় দিন, এর কুইজগুলো (স্টেপ বাই স্টেপ) খেলুন, অডিও শুনুন, কার্টুনগুলো দেখুন ১ মাস পর পার্থক্যটা কাউকে জিজ্ঞাসা করা লাগবে না।

দ্য অনলাইন ইন্টারভিউ: আপনার দৃষ্টিতে সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইট কোনটি? কেন?
মামুন সৃজন: আমি এখনো পর্যন্ত oDesk-কে এবং গ্রাফিক ডিজাইনারদের জন্য 99Designs.com কেই সেরা ফ্রিল্যান্স সাইট মনে করি। oDesk-কে পছন্দ করার মূল কারণ হচ্ছে এখানে পর্যাপ্ত কাজ রয়েছে, এখানে ধান্দাবাজ কম এবং এদের সাপোর্ট সেন্টারটিও খুবই রেসপনসিভ। যেকোন সমস্যায় আপনি সাপোর্ট সেন্টারের সহযোগিতা নিতে পারেন। আওয়ারলি কাজের ক্ষেত্রে টাকা মার যাবার সম্ভাবনা নেই। অবশ্য Elance-ও আগের চাইতে অনেক আধুনিক হয়েছে।

আর গ্রাফিক ডিজাইনারদের জন্য 99Designs ভাল হবার প্রথম এবং প্রধান কারণ হচ্ছে এর রেট। একথা স্বীকার করতেই হবে, আমরা যে যাই করি না কেন, টাকার হিসেব আমাদেরকে করতেই হবে। 99Designs মূলতঃ একটি কনটেস্ট মার্কেটপ্লেস। অর্থাৎ, এমপ্লয়ার তার কাজের বর্ণণাসহ প্রাইজ মানি ঘোষণা করবেন, এবং ডিজাইনাররা যার যার ডিজাইন জমা দেবেন। বিজয়ী ডিজাইনার পুরস্কারের টাকাটা পেয়ে যাবেন। এখানে বিড করার কোন ঝামেলা নেই। যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে আমি পরামর্শ দেব শুধুমাত্র Guaranteed কনটেস্টগুলোতে অংশগ্রহণ করার।

দ্য অনলাইন ইন্টারভিউ: ফ্রিল্যান্সিং-এর পুরো প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে বলবেন কি?
মামুন সৃজন: ফ্রিল্যান্স-এর প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। এটা আপনি দেশের বাইরের কাজ করেন আর ভেতরের কাজ করেন না কেন। যার কাজ করানো দরকার তিনি বলবেন তিনি কী চাইছেন এবং যিনি কাজটি করতে চাইছেন তিনি বলবেন তিনি কত টাকায় কত সময়ের মধ্যে কাজটা করে দিতে রাজি আছেন। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনাসাপেক্ষে কাজটি সম্পাদন হয়।

এক্ষেত্রে আবার থার্ড পার্টির মাধ্যমেও যোগাযোগের কাজটি হয়ে থাকে। বিনিময়ে তারা আপনার কাছ থেকে কাজের উপরে বা মাসিক কোন চার্জ নেবে। যেমন ওডেস্কের কথাই ধরুন, এখানে একজনের তার প্রতিষ্ঠানের লোগো ডিজাইন করার জন্য একটি কাজ পোস্ট করলেন এবং যারা লোগোটি ডিজাইন করতে আগ্রহী তারা কাজটিতে বিড করবেন এবং এম্প্লয়ার যাকে খুশী তাকে কাজটা দেবেন। কাজ শেষে এম্প্লয়ার লোগোটি ডিজাইন করার জন্য যে টাকা দেবেন তার ১০% ওডেস্ক কেটে রাখবে তাদের সার্ভিস চার্জ হিসেবে। অর্থাৎ, কাজটি যদি ১০০ ডলারের হয়, তবে আপনি পাবেন ৯০ ডলার।

দ্য অনলাইন ইন্টারভিউ: ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হন কি? কেমন?
মামুন সৃজন: একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সবচে বড় যে সমস্যা হয় তা হচ্ছে পরিচয়। মফস্বলে বসবাস করি এবং আমাদের আশপাশের মানুষজন এখনো এতটা আধুনিক হননি যে, আপনি বলবেন আপনি ঘরে বসে বিদেশের কাজ করেন আর তারা তা বিশ্বাস করবে। ফলে আমাকে যখন কেউ আমার পেশা জিজ্ঞাসা করেন, তখন খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।

অনেক ফরমও পূরণ করতে গিয়ে এ সমস্যা দেখা দেয়।

দ্বিতীয় সমস্যা টাইম জোন। যারা দেশের বাইরের কাজ করে থাকেন এ সমস্যায় কমবেশী সবাইকেই পড়তে হয়। আমি দুটো প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে মাসিক বেতনে কাজ করি। একটার অফিস Colorado-তে অন্যটা California-তে। সময় হিসেবে ১৩-১৪ ঘন্টা এদিক ওদিক। ওই প্রতিষ্ঠানে আর যারা চাকরী করেন প্রত্যেকেই স্থানীয়। আমিই শুধুমাত্র ভার্চুয়াল অফিস করি। তাই সবার সাথে যোগাযোগের স্বার্থে আমাকেই রাত জাগতে হয়, আমার একার জন্যতো সবাই সারারাত বসে থাকবে না। তাই আমার শিডিউলই বদলাতে হয়েছে।

দ্য অনলাইন ইন্টারভিউ: বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রিল্যান্সিং-এর অবস্থান এখন কোথায়?
মামুন সৃজন: আমি মনে করি এদিক থেকে বাংলাদেশ আগের চাইতে অনেক এগিয়েছে। ওডেস্ক তাদের মার্কেটপ্লসে যারা কাজ করেন তাদের উপরে একটি পরিসংখ্যান করে থাকে। গত মাসের (সেপ্টেম্বর ২০১১) ফলাফল অনুযায়ীও বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ৭ম স্থানে রয়েছে এবং অনেকদিন ধরেই এ অবস্থান ধরে রেখেছে এত প্রতিকূলতার (বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, টাকা লেনদেন ইত্যাদি) মধ্যেও; যেখানে চায়নার মত এত মানুষের দেশ ৮ম স্থানে। আর সবচে বড় ব্যাপার, বাংলাদেশের পরিচিতি ডাটা এন্ট্রি কান্ট্রি হিসেবে নয়; যা ফিলিপাইনের মধ্যে দেখা যায়। ইন্টারনেট সেবার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে, তরুণদের মধ্যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, আশা করা যাচ্ছে ৭ থেকে আমরা এখন শুধু সামনেই এগোবো।

দ্য অনলাইন ইন্টারভিউ: নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন‌্য কোনো দিক নির্দেশনা?
মামুন সৃজন: নির্দেশনার কথা যদি বলেন তবে বিষয়টিকে এভাবে বলা যেতে পারে-

  • কাজের জন্য এপ্লাই করার আগে নিজের প্রোফাইলটা সুন্দর করে তৈরী করুন। পোর্টফোলিওতে আপনার সেরা কাজগুলো রাখুন। যে ধরণের কাজ করতে চাইছেন, সে সংক্রান্ত স্কিল টেস্ট দিন।
  • নতুনদের মধ্যে প্রথম দুমাস একটা প্রবণতা দেখা যায়, জব পোস্ট দেখলেই তাতে বিড করার। এ কাজটি করবেন না। একটু ধৈর্য ধরেন, কাজের অভাব নেই। শুধুমাত্র সে কাজটিতেই বিড করুন যে কাজটিতে আপনি পুরোপুরি দক্ষ।
  • কভার লেটার কপিপেস্ট বাদ দিন। আপনি কাজের বর্ণণা পড়ুন এবং মনে করুন, কাজটা আপনি পোস্ট করেছেন, এবারে কী লিখলে আপনি তাকে অন্তত যাচাই করে দেখতে আগ্রহী হবেন। অনেকেই দেখা যায়, একটি কভার লেটার কোথাও থেকে কপি করে রেখেছেন, এবং সব কাজেই একই কভার লেটার পেস্ট করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, একটা কাজে অনেক সময় শতাধিকও এপ্লিকেশন জমা পড়ে। এরমধ্যে এরকম চালাক আরো থাকতে পারে। এবার আপনি যতই কাজ জানুন না কেন, অন্য কারো সাথে আপনারটা মিলে গেলে দু’জনই চান্স হারাবেন। আর হ্যাঁ, কভার লেটারে যাই লিখুন না কেন, বানান এবং ব্যকরণটা সঠিক হওয়া চাই।
  • বিড করেছেন, কাজ পেয়েছেন, কাজ করেছেন, কাজ শেষ। এরপর কী করবেন? আবার কাজ খুজতে বেরোবেন? হ্যাঁ, অবশ্যই বেরোবেন, কিন্তু যার কাজটা সবেমাত্র শেষ করলেন, তাকে জিজ্ঞাসা করুন তার আরো কোন কাজ আছে কিনা; তাকে অনুরোধ করুন, আপনার কাজ যদি তার পছন্দ হয় তবে ভবিষ্যতেও আপনাকে কাজ দিতে।
  • ওভার স্মার্ট হতে যাবার দরকার নেই। অনেকেই দেখা যায় মেসেঞ্জারে তার এমপ্লয়ারকে :ডি লিখে ৩২টা দাঁত দেখিয়ে দিয়েছে, :পি লিখে ভেঙচি কাটছে বা মেসেজে লিখে দিল Hey Dude, Whatz up? এগুলো কোন প্রোফেশনালের ভাষা নয়। আপনি লক্ষ্য করুন, আপনার এমপ্লয়ার আপনাকে কিভাবে সম্বোধন করছে, আপনিও তার সাথে সেভাবে কথা বলুন।
  • কাজ পাবার পর আপনার এমপ্লয়ারের রুচি বুঝার চেষ্টা করুন। ধরা যাক, আপনাকে একটি বিজনেস কার্ডের ডিজাইন করতে বলেছে। আপনি আগে তাদের সাইট, ফন্ট, স্টাইল দেখে নিন এবং আপনার কাজে সেগুলো প্রয়োগ করুন, পছন্দ না করার কোন কারণ নেই।
  • ফ্রিতে কোন কাজ করবেন না বা করার অফার করবেন। আপনার এমপ্লয়ার আপনাকে হায়ার করার আগে আপনাকে হয়তো একটা খসড়া তৈরী করতে বলতে পারে। সেক্ষেত্রেও ডিজাইনাররা ওয়াটারমার্ক করে এবং অন্যরা যেভাবে নিরাপদ মনে করেন, যাতে আপনার স্যাম্পল দিয়েই কাজ চালিয়ে দিতে না পারে সেভাবে দিন।
  • বিড করার সময় এম্প্লয়ারের বাজেট, এভারের বিড এবং ওই কাজের দাম আসলেই কত হতে পারে তা বিবেচনা করে বিড করুন। অনেকে মনে করেন, অনেক সস্তায় বিড করলে হয়তো কাজ পাওয়া যাবে। এটা ভুল ধারণা, হাতে গোনা দু’একজন ছাড়া সবাই দামের চাইতে মানের ব্যাপারটাকেই বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
মামুন সৃজন– আত্মবিশ্বাসী, সৃজনশীল একজন চমৎকার মনের মানুষ। জন্ম ঝিনাইদহ জেলায়। জন্মতারিখ ৩০ ডিসেম্বর।
পেশায় ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনার এবং ওয়েব ডেভলপার। দিনের শুরু থেকে শেষ সব খুটিনাটি অনলাইন কেন্দ্রিক। পাশাপাশি রেডিও কোলাহলে টেকনিক্যাল এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কর্মরত আছেন। বাকি সময়টা কাটে ব্লগ লিখে নয়তো পড়ে…।
পরিচালনা করছেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠান Creative Aliens.

এছাড়াও তিনি ফেসবুক গ্রুপ oDesk Help-এর একজন এডমিন। ওডেস্ক বিষয়ক যেকোনো হেল্পের জন্য সেখানে তাকে পাবেন।

ফেসবুক-এ লগিন থাকা অবস্থায় মন্তব্য করুন-

টি মন্তব্য

25 Comments

Facebook

Get the Facebook Likebox Slider Pro for WordPress