একজন প্রকৃত মেধাবী শিল্পী বলতে যা বোঝায়_ তার পরিপূর্ণতা দেখা যায় রেইনির মাঝে। মুগ্ধ হওয়ার মতো তার পারফরম্যান্স, কথা বলার ঢং, চলন-বলন সবকিছু। মানুষ হিসেবেও তিনি চমৎকার এক উদাহরণ হতে পারেন। জ্যাজ আশ্রিত হিপ হপ গানে পারদর্শী রেইনির প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে মাত্র ক’দিন আগে; মার্চের ৩ তারিখে। নাম, ‘দিস থিং অব আওয়ারস’। সম্প্রতি ‘লাইম’ ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের গান, সময় ও স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেন তিনি। চলুন, পাঠ করা যাক সেটি।
রেইনির সঙ্গে কথোপকথন
গ্রন্থনা ও অনুবাদ: সিনথিয়া শারমিন
আপনার প্রথম লাইভ পারফর্মিং সম্পর্কে জানতে চাই, কীভাবে এত চমৎকার সম্ভব হয়েছিল?
সত্যি কথা বলতে কী প্রথমবার লাইভ পারফর্ম করার সময় আমি খুবই নার্ভাস ছিলাম। আর আমি বিশ্বাস করি, নার্ভাস না হলে এতটা ভালো করতে পারতাম না! কারণ নার্ভাস ছিলাম বলেই ব্যাপারটাকে আমি গুরুত্ব দিয়েছি। কিংবা বলা যায়, ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিয়েছি বলেই নার্ভাস ছিলাম।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। এত অল্প বয়সে এ জগতে জড়ালেন কী ভেবে?
আসলে আমি নিজের জন্যই কিছু গান লিখেছিলাম। পরে দেখলাম এবং অনুভব করলাম, আমার আশপাশের সবাই সেগুলো শুনে মুগ্ধ হচ্ছে। ফলে আমি উৎসাহ পেলাম। বলা চলে, এ জগতে আমাকে টেনে আনল তাদের মুগ্ধতা ও আবেগ।
প্রথমদিকে লেখা সম্পর্কে কিছু বলুন।
আমি লিখতাম ডায়েরির মতো। আমার জীবন নিয়ে, শুধু নিজের জন্য। পরবর্তী সময়ে সেগুলো আমাকে সাহায্য করেছে নানা ইস্যুতে বিভিন্ন বিষয়কে গান দিয়ে বোঝাপড়া করতে। শুরুতে কাউকে কিছু শোনানোর উদ্দেশ্যে এসব করিনি। তবু অনেকে ভালো বলল। এরই ফলে নিজের গান আরও অনেকের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছাটা পেয়ে বসল আমায়। আর কণ্ঠকে ঠেলে দিলাম সে পথেই।
আপনার গানের কথা কি নিজেকে এক ধরনের সংশোধন করার মতো ব্যাপার নয়?
আমি সে রকম নই_ যারা নিজের দুঃখগাথা শুনিয়ে মানুষের আবেগ কুড়াতে চায়। আমি আমার লেখায় ব্যক্তিগত ব্যাপার-স্যাপার টেনে আনি না। আমার গান কেবলই গান; তাতে কিছু আবেগ মিশে আছে_ এই যা!
আপনার লেখার প্রক্রিয়া কী?
লেখালেখি কখনও জোর করে হয় না। তাই লেখার জন্য আমি কোনো সুনির্দিষ্ট সময় ঠিক করি না। এটা যে কোনো সময়ই হতে পারে। হয়তো ঘুরে বেড়ানোর সময় একটা লাইন লিখলাম, বাসায় বসে আরেক লাইন। এভাবেই হয়ে ওঠে একটা আস্ত গান। তবে লেখার জন্য মানসিক প্রস্তুতি আমার সবসময়ই থাকে।
অ্যালবাম বের করার প্রস্তাব আপনার কাছে অনেক আগেই এসেছিল। তবু সময় নিয়েছিলেন। কেন এই সময় নেওয়া?
আমি মনে করি, এটা একটা সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। কেননা, প্রলোভনে ভেসে যেতে আসিনি আমি। বরং এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম, যা আমার ভাবনায় সাজানো ছিল। আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম, উৎস কোথায়।
রেকর্ডিং কোম্পানি কী আপনার গানে তাদের চাওয়া-পাওয়াকে চাপিয়ে দিতে চায়নি?
তাদের আগ্রহকে আমি সম্মান দিয়েছি। কথা বলেছি তাদের সঙ্গে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের মেধার ওপরই ভরসা রেখেছি আমি। আপস করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। নিজের জায়গাটা ধরে রাখতে পেরেছি বলেই আমার বিশ্বাস।
আপনার ম্যানেজার নিশ্চয়ই আপনার রুচিটা বুঝতে পেরেছিলেন?
তা তিনি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। তবে পরিষ্কার হওয়ার জন্য তিনি আমাকে টেক্সট করেছিলেন। বলেছিলেন, আমি চাইলে তার সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত আলাপ করে নিতে পারি। কিন্তু সেই মুহূর্তে সেটা সম্ভব ছিলো না। কেননা, তিনি লসঅ্যাঞ্জেলস থাকতেন। আর আমার তখন পাসপোর্ট ছিলো না। সুতরাং বুঝতেই পারছেন।
অনেকের মতে আপনার কণ্ঠ আপনার দ্বিগুণ বয়সী ব্রিটিশ গায়িকা করিন বেইলির মতো। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
তার গান আমার ভালো লাগে। করিন বেইলি ও এমি ওয়াইনহাউস আমাকে বেশ উৎসাহিত করেন। তারা আমার জন্য সত্যিকার অর্থেই অনুকরণীয়। কারণ তাদের আবেগগুলো স্বচ্ছ ও খাঁটি।
সহযোগীদের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক কেমন?
ভীষণ ভালো। তারা আমাকে উৎসাহ দেন, ‘ভালো হয়েছে’, ‘চালিয়ে যাও’, ‘আমরা আছি তোমার সঙ্গে’ ইত্যাদি বলে। তাদের এই অনুপ্রেরণা আমাকে আরও ভালো গান করতে সহযোগিতা করে।
গান সম্পর্কে আপনার ধারণা পরিস্কার থাকায় অন্যদের কী ডিরেকশন দেন?
আমার সঙ্গে যারা কাজ করেন, তাদের জানার পরিধি এবং অভিজ্ঞতা আমার চেয়ে অনেক বেশি। তবে আমার যেহেতু গান নিয়ে একটা ব্যক্তিগত লক্ষ্য আছে, তাই তাদের যতোটা সম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করি- আসলে আমি কী চাই?
‘হিয়ারিং ভিশন’ ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করবেন?
যে লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করছি, সেটা বোঝাতেই কথাটি ব্যবহার করে থাকি।
এখন কী নিয়ে ব্যস্ত?
একটা মিউজিক ভিডিও নিয়ে কাজ করছি, আর লাইভ শো নিয়েও ভাবছি।