উদ্যোক্তা ব্লগার-ফ্রিল্যান্সার

সাফল্য থাকলে আপনার হতাশা কাজ করবে না

আবুল কাশেমএক্সপোনেন্ট ইনফোসিস্টেম প্রাঃ লিমিটেড-এর সিইও। একজন সফটওয়্যার প্রোগ্রামার, ব্লগার, ইন্টারনেট মার্কেটার, টেকনোলজি টিচার… নানা পরিচয় থাকলেও তিনি মূলত নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতেই পছন্দ করেন। ক্যারিয়ার শুরু টেকনোলজি শিক্ষকতা দিয়ে- অ্যাপটেক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। একসময় লোকাল মার্কেটের জন্য প্রচুর সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি থিতু হয়েছেন এই অনলাইন জগতে এসেই। নিজের আউটসোর্সিং বিজনেস পরিচালনার সাথে সাথে ওয়েব টেকনোলজি ও সলিয়্যুশেন নির্বাচনে ব্যবসার ধরন অনুযায়ী ওয়েব স্ট্রাটেজি ও অনলাইন মার্কেটিং পরিকল্পনা তৈরির পরামর্শক হিসাবে মুলত কাজ করে থাকেন । ইন্টারনেট বিজনেস, নিশ মার্কেটিং ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এ জানাশোনার পরিধি অনেক অনেক। নিজের যোগ্যতাগুলো লুকিয়ে রাখতেই যেনো বদ্ধ পরিকর। তবে নলেজ শেয়ার আর দক্ষ প্রফেশানাল তৈরির লক্ষ্যে পরিচালনা করছেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠান এক্সপোনেন্ট একাডেমি। যেখানে শিক্ষার্থীদের শেখাতে উজাড় করে দেন নিজেকে। উনার হাত ধরে অনেকেই আজ অনলাইন বিজনেসে স্বাবলম্বী, সফল ব্যক্তিত্ব। এসব ভেবে যেমন আনন্দ পান তেমনি নতুন কাউকে শেখাতেও সমান ভালো লাগে। এছাড়াও কাজ করছেন বিডি হায়ার ডট কম, উই বিল্ড লিংক ডট কম এর সিইও এবং কী পারসন হিসেবে।
জেগে থাকা প্রতিটা মুহূর্ত কাজের মাঝে মগ্ন থাকলেও কখনও তিনি বোরিং ফিল করেন না। কাজকে ভালোবেসে, শ্রদ্ধা করেই সময় পার করেন। আনন্দ পান একমাত্র মেয়ে জাহা’র সাহচার্য। জন্ম ৩০ জুন। আরও জানতে ভিজিট করতে পারেন উনার ব্যক্তিগত ওয়েব ঠিকানা- Kashem.org.

আপনার দৃষ্টিকোন থেকে এসইও’র ব্যাপারে জানতে চাচ্ছি-?
ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায় । এর প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব নিয়েই বলি। তথ্য খোজাঁর জন্য সার্চ ইঞ্জিন অনেক গুরুত্বপূর্নভাবে পৃথিবীর সব দেশেই ব্যবহার হয়। যত দিন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার হবে ততদিনে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের প্রয়োজন হবে। অনেকেই এসইও মানে লিঙ্ক বিল্ডিংকেই বুঝে । এটি খুবই ভূল ধারনা । এসইও তে অনেকগুলো ধাপ আছে। আবার প্রতিটি ধাপ প্রয়োগ করায় দক্ষতা ও কৌশলের প্রয়োজন হয়। নতুন সাইট তৈরিতে যে ধরনের কৌশল হয়, পুরাতন সাইটের এসইও করার ক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের কৌশল নিতে হয়।

এফিলিয়েট মার্কেটিং ইত্যাদি আসলে কী?
কোন ওয়েবসাইটে ভিজিটর পাঠিয়ে তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করতে সাহয্য করে তা থেকে নির্দিষ্ট হারে কমিশন উপার্জন করার পদ্ধতি হলো এফিলিয়েট মার্কেটিং। এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মুল বিষয়টা হলো কেনার জন্য প্রস্তুত এমন ভিজিটরকে মার্চেন্টের সাইটের প্রোডাক্ট পেইজে পাঠানো। প্রথমে আপনাকে ভিজিটর যোগাড় করতে হবে। নানাভাবে আপনি ভিজিটর পেতে পারেন । তারা হতে পারে সার্চ ইঞ্জিন থেকে পাওয়া অর্গানিক ট্রাফিক, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাওয়া রেফারেল ট্রাফিক, আপনার ই-মেইল লিস্টে থাকা সাবস্ক্রাইবার। এছাড়াও অনলাইন মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে আপনি ট্রাফিক জোগাড় করতে পারেন। এফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে একটি নিশ নির্বাচন করে, ভিজিটর সংগ্রহ করা এবং এই নিশে ভিজিটরের চাহিদা রয়েছে এমন সব পন্য কিংবা সেবা নির্বাচন করে তা প্রমোট করা।

আপনার হিসেবে এসইও’র ক্রমান্বয়তাগুলো কীভাবে সাজাবেন?
কিওয়ার্ড রিসার্চ, সাইট স্ট্রাকচার তৈরি, কিওয়ার্ড অপটিমাইজড কন্টেন্ট তৈরি, ইন্টারনাল লিঙ্কিং, সোশ্যাল অপটিমাইজেশন, প্রমোশন- লিংক বিল্ডিং/সোস্যাল সিগনাল বিল্ডিং এবং এনালিটিক্স।

ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট-এর সাথে এসইও’র সম্পর্ক কতটুকু বলে মনে করেন?
এসইওর কাজ সাইটে ট্রাফিক নিয়ে আসা। ডিজাইনের কাজ হলো ভিজিটর যাতে সাইটে এসে ৫ স্টার এক্সপেরিয়েন্স পায় সেটা নিশ্চিত করা । প্রোগ্রামারদের সাইটটিকে এমনভাবে তৈরি করতে হয় যাতে সার্চ ইঞ্জিন সহজে সাইটটি ক্রল করতে পারে । তাদের নিশ্চিত করতে হয় এমন কোন টেকনোলজি ব্যবহার না করা যাতে সাইট ইন্ডেক্সিংয়ে সমস্যা হয় অথবা সার্চ ইঞ্জিনের গাইড লাইন ভায়োলেট করে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে কি এসইও অবশ্যই জানতে হবে?
এসইও হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন থেকে অর্গানিক ভিজিটর পাওয়ার কৌশল। একটা সাইট অনেকভাবেই ভিজিটর পেতে পারে। সেটা পিপিসি এডভার্টাইজমেন্টের মাধ্যমে, এসইও করে, ই-মেইল মার্কেটিং করে, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে । তাই ভিজিটর যোগাড়ের ক্ষেত্রে এমন হতে পারে আপনি সার্চ ইঞ্জিনের উপর মোটেও নির্ভরশীল নয়, আপনি শুধু ইমেইল মার্কেটিংয়ের উপর নির্ভরশীল কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল সেই ক্ষেত্রে এসইও না করেও আপনি এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন।

ধরুন একজন নতুন, যে কিছুই জানে না এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে। তাকে আপনি কি কি শিখতে বলবেন? কীভাবে শিখতে বলবেন?
অনেক কিছুই শিখতে হবে আবার এই শেখাটা অনেকভাবেই শুরু করা যায়। আমি বলব একটা সাইট কি কি ভাবে উপার্জন করতে পারে সেই বিষয়টা আগে বোঝা দরকার। তারপর কিভাবে দক্ষ ইন্টারনেট মার্কেটাররা একটা সাইট তৈরি করার জন্য নিশ নির্বাচন করে, সাইট তৈরি করে, সাইটের ভিজিটর পাওয়ার জন্য কি কি করে অর্থাৎ এসইও, লিংক বিল্ডিং, ই-মেইল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, কন্টেন্ট তৈরি, এনালিটিক্স ইত্যাদি বিষয়গুলো জানা উচিত । এছাড়া ওয়ার্ডপ্রেসেটা জানা দরকার।

বাংলাদেশে এই এফিলিয়েট মার্কেটিং কাজের সুযোগ-সম্ভাবনা-বিড়ম্বনা-সমস্যা কেমন?
এফিলিয়েট মার্কেটিং একটা বিজনেস । বিজনেসের জন্য কৌশল, এটিচিউড আর বিনিয়োগ করার প্রয়োজন হয় । এগুলো করতে পারলে সবার সুযোগ আছে। সমস্যা বলতে তিনটি প্রধান–

  1. এই বিষয়ে জ্ঞানের অভাব
  2. ইংরেজিতে ভালো মানের কন্টেণ্ট তৈরি করার ক্ষমতার অভাব।
  3. মানসিকতার সমস্যা– অনেকেই আছে খুব সহজেই আয় করতে চায় । কষ্ট কিংবা বিনিয়োগে উৎসাহী না ।

বর্তমানে বেসরকারীভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন কাজ শেখানোর জন্য। সেগুলো সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন- কতটা মানসম্মত সেইসব প্রতিষ্ঠান? বা আসলেই তারা শেখানোর মতো যোগ্যতা রাখে কিনা?
আসলে এই বিষয় মন্তব্য করা ঠিক হবে না । আমাদের নিজেদের একটা প্রতিষ্ঠান আছে । তাই অন্যেরটা নিয়ে কথা বলা অনৈতিক মনে করি।

সরকারীভাবে কি এরকম কোনো উদ্যোগ নেয়া যায়? আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে সরকারের জন্য?
অবশ্যয় যায় । আমারতো মনে হয়ে খুব সহজেই তারা চাইলে সেটা করতে পারে। আমি শুনেছি সরকার আউটসোর্সিং নিয়ে অনেক কিছু করেন । অনেক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জেলা পর্যায়েও অনেক কোর্স করিয়েছে। এই সবের আদৌ দরকার ছিলো বলে আমি মনে করি না । সরকারের জন্য পরিকল্পনা নাই । আমি অতো যোগ্য নই । তবে যেহেতু আমি টেকনোলজি নিয়ে কাজ করি আর টেকনোলজি সার্ভিস দেই সেই হিসাবে বলতে পারি সরকার চাইলে খুব সহজে একটা এডুকেশন পোর্টাল বানাতে পারতো । অনলাইনে কোর্সগুলো তৈরি করে দিতে পারতো । মূল অর্থ ব্যয় করা যেতো কোয়ালিটি কোর্স কনটেন্ট তৈরিতে । সাইটের মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছানো সহজ হতো । বলতে পারেন সবারতো ইন্টারনেট নাই । কম্পিউটার নাই। তাহলে তাদের ট্রেনিং দিয়ে লাভ কি? এই দুই জিনিষ ছাড়াতো আউটসোর্সিং করা যাবে না । আর সবার ফ্রিল্যান্সিংই করতে হবে কেনো? আরেকটা বিষয় সরকারসহ এই বিষয়ে যারা কথা বলেন টকশো করেন, পত্রিকায় লেখেন তাদের বলতে চাই পুরো মার্কেট সম্পর্কে একটু রিসার্চ করতে পারেন । আমার কাছে আশ্চর্য লাগে যে আউটসোর্সিং ইন্ড্রাস্টি কিংবা ইন্টারনেট মার্কেট বলতে অনেকে ইল্যান্স আর ওডেস্ক-ই বুঝে ।এটা খুবই ভুল হচ্ছে । তাই মার্কেট সম্পর্কে জানা দরকার নাহয় সঠিকভাবে কাজ করা হবে না। তার প্রমান কিছুদিনের মধ্যে পাবেন । আপনি দেখবেন হাজার হাজার হতাশ ফ্রিল্যান্সার । আপনি দেখবেন এদের অনেকই গন্তব্য খুজে বেড়াবে।

আপনার দৃষ্টিকোন থেকে বলুন বাংলাদেশে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং-এর কী অবস্থান?
আমি পুরো বিষয়টা নিয়ে মোটেও খুশি নই । আমাদের যে ধরনের স্ট্রাটেজি দরকার তা নেয়া হয়নি। জাতি হিসাবে আপনিতো পুরো ওয়েব ইন্ড্রাস্ট্রিকে দেখতে হবে। ভারতে কি আমাদের মতো ফ্রিল্যান্সিংকেই ওয়েব ইন্ড্রাস্ট্রি ভাবে না কি? আমাদের দেশে গার্মেণ্টস যেমন সেই দেশে ওয়েব ইন্ড্রাস্ট্রিও তেমন । তার প্রমান আপনি ওডেস্ক কিংবা ইল্যান্সে যে ধরনের কাজ হয় তা দিয়ে ওয়েবে সার্চ করুন । আপনি দেখেবেন শত শত ইন্ডিয়ান কোম্পানী আছে । এমন অনেক কোম্পানী পাবেন যাতে হাজার হাজার প্রফেশনাল কাজ করে। এরা অনেক ভালো বেতনেই কাজ করে। ব্যক্তিগতভাবে যেটা ৫ ডলারে করা হয়, একই কাজ কোনো কোম্পানী করলে সেটা ২০ ডলার চার্জ করবে। আমাদের উচিত হচ্ছে সেই বিষয়টা ভাবা ।ফ্রিল্যান্সিংয়ে ২০১০-১১ সালে যেমন করেছে বাংলাদেশ একইভাবে সেই রকম করার সুযোগ কমে আসছে। স্কিল্ড ক্যাটাগরির প্রফেশনাল খুব কম আছে এখন । এই সংখ্যা বাড়াতে হবে ।

ফ্রিল্যান্সিং-এ যারা নতুন আসতে চান তাদের নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
আপনি এক্সট্রা কিছু উপার্জনের জন্য, কিছু অভিজ্ঞতার জন্য, নিজেকে যুগোপযোগী রাখার জন্য ফ্রিল্যান্সিংকে প্রথম পছন্দ হিসাবে নিতেই পারেন। এটি আপনার পূরো ক্যারিয়ার হবে কিনা তা ভেবে দেখুন। ক্যারিয়ার নিয়ে আগে পরিকল্পনা তৈরি করুন। সেই পরিকল্পনায় যদি ফ্রিল্যান্সিং থাকে তাহলে সেভাবে এগিয়ে যাবেন । আর না থাকলে কোন কোম্পানীতে কাজ করুন । টাকার আগে ক্যারিয়ারের কথা ভাবতে হবে। আমার মনে হয় শুরুতে সিনিয়র কারো সাথে কাজ করলে আপনার দক্ষতা পৌনঃপৌনিক ভাবে বাড়বে । দক্ষ হলে উপার্জন জ্যামিতিক হারে বাড়বে। সাধারন ভাবে বলবো- কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালোভাবে শিখে তারপর ফ্রিল্যান্সিং শুরু করুন।

প্রশ্নটার সম্মুখীন হয়তো অনেকবার হয়েছেন। আরও একবার- কেমন করে কখন থেকে এই অনলাইন জগতে প্রবেশ?
আমি যখন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে শুরু করলাম । তখন ই-কমার্স নিয়ে অনেক কথা হতো। ১৯৯৯ সালের কথা । এই বিষয় জানার জন্য যখনি নেট পেতাম সার্চ করতাম । ওয়েবে সার্চ করলে তখন অনলাইনে আয় নিয়ে অনেক এড দেখতাম । সেই থেকেই আগ্রহ । আর আমার ফ্রেন্ডের এক বড় ভাই যার অফিসে আমি এক সপ্তাহ পার্ট টাইম কাজ করেছিলাম, উনি অনলাইনে বেশ ভালো ব্যবসা করতেন । তিনিও একটা অনুপ্রেরনা হিসাবে কাজ করেছে। বিশ্বাসটা জন্মেছে উনার কারনেই। উনার নাম বলবো না কারন উনি প্রচার পছন্দ করেন না । এড়িয়ে চলেন।

আপনি প্রতিদিন কত ঘণ্টা সময় অনলাইনে থাকেন? কীভাবে এই সময়টা ব্যয় করেন?
বিষয়টা একটু অন্যরকম আমার ক্ষেত্রে । আমার অন্য কোনো কিছু করার সুযোগ নাই। দরকারও হয় না। তাই সকালে উঠে শুরু করি ঘুমাবার সময় বন্ধ করি। ঘড়ির কাঁটার মতো চলে ।

প্রথম নিজের কম্পিউটার কবে, কেমন করে পান?
১৯৯৯ সালে । ভাইয়া টাকা পাঠিয়েছিলো । তাই দিয়ে কিনেছি।

নিজের কাজের জন্য কি কি ব্যবহার করেন আপনি?
ল্যাপটপই ব্যবহার করি । তাছাড়া মোবাইল আর ট্যাবে নেট চেক করা হয়।

কাজের মাঝে বিনোদন পান? নাকি বিনোদনের জন্য আলাদা কিছু করেন?
কাজটা নেশা হয়ে গিয়েছিলো অনেক আগেই । অনেক কিছু করতে হয়েছে । অনেক সময় দিতে হয়েছে নিজেকে তৈরি করার জন্য । তাই বিনোদনের কথা ভাবতাম না । একটা সময় এসেছিলো আমার মেয়ের সাথে সময় কাটানোটাই ছিলো আমার বিনোদন । তার সাথে অন্য কিছুই তুলনা হয় না । এমনকি আমি প্রায় ২ বছর ঠিক মতো অফিসে যেতাম না জাহার সাথে থাকার জন্য । এখনো জাহার সাথে সময় কাটানোই বিনোদন ভাবি । আর অবসরে টিভি দেখি।

ফেসবুক আপনার কাজের জন্য কতটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে?
আমি যেহেতু ইন্টারনেট বিজনেসের সাথে জড়িত ।এবং আমার কোম্পানী ইণ্টারনেট মার্কেটিং সার্ভিস দেয় আমার ফেইসবুক নিয়ে বেশ কাজ করতে হয় । ফেইসবুক মার্কেটিং স্ট্রাটেজি আমাদের কাজের একটা অংশ। আবার ক্লায়েন্টের অনেকের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য ফেইসবুক সাহায্য করে। আর আমরা লোকাল মার্কেটে কেবল ট্রেনিং দেই। কিছু ওয়ার্কসপ করি। আমাদের প্রচারের ক্ষেত্রে আমরা ফেইসবুককে গুরুত্বের সাথে ব্যবহার করি।

ফেসবুক ছাড়া আর কি কি সোশ্যাল ওয়েবসাইটে আপনি যান? সেগুলোর কাজের পরিধি সম্পর্কে বলবেন?
টুইটার আর লিঙ্কড-ইন । এছাড়া স্লাইডশেয়ার আর ইউটিউব ব্যবহার করি প্রচুর।

আপনার এক্সপোনেন্ট একাডেমি সম্পর্কে বলুন- কীভাবে কেমন করে শুরু? বলুন কাজের ধরণ-পরিধি সম্পর্কেও-?
আপনি হয়তো জানেন ২০০৬ সাল থেকেই আমরা আউটসোর্সিংয়ের সাথে জড়িত । এর আগে আমরা লোকাল মার্কেটের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করতাম । সফটওয়্যার কোম্পানী হিসাবে আমরা অনেক ভালো এগুচ্ছিলাম। কিন্তু দক্ষ প্রফেশনালের অভাবে আমরা সফটওয়্যার ছেড়ে অন্য অনলাইন সার্ভিস দেয়া শুরু করেছি । এখানেও অনেক ভালো করেছি আমরা । আমাদের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিলো তাতে অনেক দূর যেতে পারতাম । আবারো প্রয়োজনীয় লোকবল পাই নাই। তাই আমরা ট্রেনিং শুরু করি। আমরা আমাদের সময়ের কিছু অংশ ট্রেনিংয়ে ব্যয় করি। এখনো সব পরীক্ষামূলক ও ধীরে ধীরে চলছে । আপাতত ইণ্টারনেট মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন ও ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে কিছু ট্রেনিং করাচ্ছি।

এক্সপোনেন্ট একাডেমি’র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? এবং বর্তমানেই বা এর অবস্থান কি?
এখনো আমরা ট্রেনিংকে আলাদা করিনি। আলাদা ইউনিট করে প্রফেশানালি চালানোর ইচ্ছা আছে। ইচ্ছা আছে বেশ কিছু কোর্স অনলাইনে চালু করা । আপনি হয়তো জানেন ঢাকাসহ বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে আমাদের বেশ ফ্যান ও ফলোয়ার আছে। তারা আমার কাছ থেকে শিখতে চায় । তাই তাদের জন্য কিছু করতে চাই ।

বিডি হায়ার এবং উই বিল্ড লিংক ডট কম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই-?
এগুলো আমাদের মূল বিজনেস সাইট । বিস্তারিত বলা কঠিন । BDHire.com মুলত একটি ভিএ কোম্পানী। আর WeBuildLink.com একটি এসইও কোম্পানী। সাইটগুলো ভিজিট করলে অনেক কিছুই জানতে পারবেন।

বর্তমানে আপনি কি কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত?
ওয়েবে প্রতি ছয় মাস পর পর নতুন সার্ভিস চালু করতে হয় । এই মূহুর্তে আমি দুইটি সাইটের জন্যই নতুন সার্ভিস ডিজাইন করছি। পাশাপাশি বাংলাদেশ মার্কেটের জন্য xponentweb.com থেকে একই ধরনের কিছু সার্ভিস চালু করার জন্য কাজ করছি। এছাড়া বাংলাদেশ মার্কেটের জন্য আরো দুই একটি সাইট চালু করার কথা ভাবছি। তাছাড়া নিজের স্কিল বাড়ানোর জন্য আমি সবসময় পড়াশুনা করি।

কাজ করতে করতে কখনো মনে হয়েছে- ধ্যাত্তেরি! এতো কষ্ট করে কী হবে? দেই সবকিছু ছেড়েছুড়ে?
আমার তেমন মনে হয় না । আমার সাফল্য অনেক । আর আমি খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে সাফল্য আসেই । সাফল্য থাকলে আপনার হতাশা কাজ করবে না ।

ক্লায়েন্টরা যখন খারাপ ব্যবহার করে তখন কীভাবে ম্যানেজ করেন? আপনি ক্লায়েন্টের সাথে কখনো রাফ বিহ্যাভ করেন?
আমার ক্ষেত্রে সেটা হয় না বললেই চলে। আমি যে ক্লায়েন্টের জন্যই কাজ করি তা খুব সিরিয়াসলি কাজ করি। অনেকগুলো অপশনের মধ্যে সবচাইতে শ্রেষ্ঠটি আমি বাছাই করে কাজ করি। তাছাড়া আমি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পারি । আমি পড়েছিলাম ক্লায়েন্টকে হ্যাপি না ডিলাইটেড করতে হবে । তাই করার চেষ্টা করি। দেশে বিদেশে সব জায়গায় ক্লায়েন্ট আমাকে অন্যরকম মূল্য দেয়, আমার পরামর্শে সাদরে গ্রহণ করে। যার কারনে হয়তো আমি ঘড়ির কাটার মতো কাজ করতে পারছি।

ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেলিং-এর ব্যাপারে নতুনদের জন্য কোনো পরামর্শ-?
এই বিষয়টা শুরু হয় একটা যখন কেউ সার্ভিস নিতে কোয়েরি করে। আর শেষ হয় প্রজেক্টটা বুঝিয়ে দিয়ে। প্রত্যেক ক্লায়েন্ট আলাদা । প্রত্যেকটি প্রজেক্ট আলাদা । প্রতিটি পর্যায় আলাদা। প্রত্যেকটি সিটুয়েশ্যনে স্ট্রাটেজি আলাদা আলাদা হবে। তাই এই পরিসরে সব বলা যাবে না হয়তো। তবে ক্লায়েণ্টের কাছে সব সময় ট্রান্সপারেন্ট থাকা উচিত। তাদের সব সময় সৎ পরামর্শ দেওয়া, প্রতিটি ধাপে আপডেট করা খুবই গুরুত্বপূর্ন।

আপনি কি নিজেকে একজন সফল ব্যক্তি মনে করেন? কেন?
হা আর না । আমি মুসলিম । তাই আল্লাহ আমাকে যেভাবেই রাখছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকাটাই আমার ধর্ম । আর আমার তুলনায় অনেকেই সফল নয়। আবার অনেকের সাথে আমার তুলনায় হবে না । আমি যা করতে পেরেছি তাতে অনেক খুশি। আরো কিছু করতে চাই ।

অনেক সময় নষ্ট করলাম আপনার। দ্য অনলাইন ইন্টারভিউ’র পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। সময় নষ্ট হয়নি । আপনি আমার কথা জানতে চেয়েছেন তার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

ফেসবুক-এ লগিন থাকা অবস্থায় মন্তব্য করুন-

টি মন্তব্য

2 Comments

Facebook

Get the Facebook Likebox Slider Pro for WordPress